বিষাদী বাতাসে তোমার সেই ধ্বনি শুনতে পাই
তোমার তর্জনীর ইশারার গর্জনে কাঁপা অগ্নি শপথ
থৈ থৈ মানুষের ভিড়ে একটা-ই ধ্বনি।
“শেখ মুজিবের হাত ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো
বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো”
সবাই ছিল প্রস্তুত শুধুই অপেক্ষা ছিল আদেশের,
মনে প্রাণে প্রস্তুত ঝাঁপিয়ে পড়বে অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
হৃদয়ের স্পন্দন থেমে ছিল, ভয়াবহ হায়েনাদের দাপটে
ঠিক তখনি তর্জনীর ভয়াল গর্জনে বাংলার আকাশ বাতাস
কাঁপিয়ে ভেসে এলো মুক্তির আদেশ—
“তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো
রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব
এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
সেদিন আকাশে বাতাসে বজ্রপাতের হুংকারে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সবাই, শত্রুদের বুকে মরণ আঘাতে
ত্রিশ লক্ষ মানুষের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে
দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময় পেলাম
আমার দেশ, আমার মা, আমার পতাকা
আজো দেখতে পাই.. সগৌরবে উড়ছে
সবুজ বুকে রক্তের দাগ টক টক করছে।
যে পিতার হাত ধরে বাংলা স্বাধীন করে উচ্চ শিরে
দাঁড়ালাম বিশ্বের বুকে, এখনো অনেক কিছুই ছিল বাকি,
হঠাৎ এক দল নর পিশাচ হায়েনা জঘন্য স্বার্থ চিরতার্থে
আমাদের চিরতরে এতিম করে গেলো।
সাদা পাঞ্জাবী গায়ে মুখে জ্বলন্ত তামাক পাইপ,
সুদীপ্ত দৃষ্টির শান্ত ব্যাঘ্রের কন্ঠে উচ্চারিত হলো..
কি চাই এখানে?? —
উত্তর এলো লাইট মেশিনগানের একঝাঁক বুলেট
রক্ত ঝরা বুকে নিথর শরীর গড়িয়ে পড়ছিলেন সিঁড়ি দিয়ে…
সারা বিশ্ব খোদার আরশ কেঁপে কেঁপে উঠেছিল থর থর করে
হায়েনাদের নিকৃষ্টতম হাসির উল্লাস ধ্বনিতে….
জাতি আজো স্তম্ভিত… সেই নীরবতায়… এখনো বাকরুদ্ধ…..
– তানভীর কালাম আজীমি, এথেন্স
সাদা কালো মেঘগুলো হারিয়েছে কবেই
সোনালী স্বপ্ন ভোরের অনুসন্ধানে
অমৃতের সেই সুখ নগরীর সুখ সন্ধানে।
যেখানে ছোট ছোট ব্যথাগুলো দাঁড়িয়ে থাকে
আলোকিত সেই অমল দৃশ্যের অন্তরালে
অধীর অপেক্ষা নিয়ে একাকী নীরবে।
মাঝে মাঝে নিশ্চুপ লুকোয় হৃদয়ের গভীরে
অতীতের ছেঁড়া সব ছবি বুকে ধারণ করে
নির্ঘুম নয়নের জ্যোতিহীন দৃষ্টির বিচ্ছুরণে।
হৃদয়ের অতলে নিরাশার জোনাকিগুলো
বিষাদের ফোকলা মুখে নির্মম হাসে।।
ধুলোজমা ফ্রেমের জরাজীর্ণ দর্পনে
উদাসীনতায় উপেক্ষা পরমার্থ জীবনে।
গতিচ্ছন্দের প্রবাহে নির্বাক পথচলা এভাবেই
শূন্য হাতে অনন্তযাত্রার প্রতীতির পথে
নিরুত্তর প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে নতশিরে
ছুটেই চলছে জীবনতরী গন্তব্যহীন স্রোতে।
সময়ের অশ্রু ঝরে অসময়ের আশির্বাদে
বিমূঢ় পৃথিবীর বুকে অবাঞ্চিত প্রত্যাশায়
কোজাগরী আকাশের উর্ধ্বচোখের অস্থিরতায়
সন্ধ্যার বুকে অপূর্ণতার পালঙ্কের চৌকোণায়।
__________________