প্রদীপ কুমার সরকার
September 25, 2019
বচন নকরেক
September 25, 2019

প্রীতিলতা

রাক্ষুসী

 

সেদিন আকাশে ভরা পূর্ণিমা ছিল,

এক আধটু বৃষ্টি ও নামল,

শুনশান রাতে আঁতুড়ঘরে মায়ের ক্লান্ত

কোল জুড়ে আমি এলাম।

বাবার কপালে ভাঁজ পড়ল।

পড়শি কাকীমা উঠোনে নেমেই সবাইকে শুনিয়ে গেল,

আবার মেয়ে হল গো মেয়ে,রাক্ষুসী এসেছে,

এবার মাকেই খাবে।

সেবার মাকে খাইনি গো,

তবু তখন থেকেই আমার নাম হয়ে গেল রাক্ষুসী।

বড্ড বেশি অযত্নের খামে কুমড়োর

ডগার মত লকলকিয়ে বেড়ে উঠলাম।

 

আমাদের সাদামাটা গৃহস্থ বাড়ি ছিল।

একটা উঠোন ছিল,

উঠোনে একটা সকাল ছিল,

দুপুর এবং রাত ও ছিল।

জানালার কাছটায় বাতাবি লেবুর মাচা ছিল,

মাচার ভেতর টুনটুনির সংসার ছিল।

মায়ের আঁচল তলে সন্ধ্যা প্রদীপ ছিল।

সিঁথির ভাঁজে সিঁদুর ছিল।

হঠাৎ একদিন তুলসী তলের বাতি নিভে গেল,

অন্ধকার হয়ে গেল পুরো পৃথিবী।

জ্যোৎস্নার আনাচেকানাচে মেঘ জমলো।

নক্ষত্রের কানাকানি ছাপিয়ে কিছু পায়ের শব্দ শোনা গেল।

আমি জানালায় চোখ পাতি,

একঝাঁক পিঁপড়ের মত শকুন এল,

এখানে সেখানে ছড়িয়ে পড়ল,

আগুন জ্বেলে দিল গোয়াল ঘরটায়।

মা টুলুকে কোলে জড়িয়ে পিছন

দরজায় যেতে যেতে বলল,

 

 

পালিয়ে যা, বর্গী এসেছে,

নয়ত ওরা ছিঁড়ে খাবে মা।

বর্গী তো সেই কবেই গেল,

আবার কেন এল বুঝতে পারিনি।

পায়ে পায়ে যেতে যেতে মনে পড়ল

আমার পুতুল বউটার কথা।

অন্ধকারে ডানে বায়ে হাতড়ে খুঁজি।

খুঁজে পাই একটি হাত।

সে হাত বাবার নয়, মায়ের নয়,

এমনকি পড়শি বাড়ির ও নয়।

আমি চিৎকার করে মাকে ডাকি।

টুলুকে ফেলে মা ছুটে আসে।

মাকে পেয়েই সে কি উল্লাস!!

বুনো শিয়ালের মত চকচকিয়ে উঠে শকুনের চোখ।

এক ঝটকায় খুলে নিল মায়ের শাড়ি,,

তারপর,,,,,,,,,, আর কিচ্ছু জানিনা।

পরদিন সকালে মাকে পেয়েছি মেঘনার বালুচরে।

একঝাঁক চুল কেটে নিল,দুচোখ উপড়ে নিল,

হৃৎপিন্ড রক্তে মাখামাখি।

তখনো বুকের ক্ষত থেকে ছুঁইয়ে পড়ছিল রক্ত!!

তবু থ্যাতলানো মুখে লেপ্টে ছিল ভালবাসা।

তখনো সিঁথির ভাঁজে সিঁদুর ছিল,,,,

শকুনের দল খুবলে খেল আমার মাকে।।

না,না, চিল শকুন নয়, আমিই খেয়েছি আমার মাকে।

মায়ের রাক্ষুসী মেয়ে গো,রাক্ষুসী মেয়ে।

 

লেখক পরিচিতি:

প্রীতিলতা

মেঘনার বুকে জেগে উঠা হাতিয়া দ্বীপে জন্ম।

বেড়ে ওঠা এবং পড়ালেখা শুরু হাতিয়া।

চট্টগ্রাম কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করে এখন কলেজ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।